সফল উদ্যোক্তার সাফল্য মজিদা খাতুন ২০০৯ সালের পূর্বের দিকে তাকালে আজকের অবস্থান আর অতীতের অবস্থানের পরিবর্তন আমাকে অবাক করে দেয়। কেননা, পূর্বেকার অবস্থায় আমাকে গ্রামের লোকজন তেমন ভাল চিনতনা, আজ আমার পাশে বসে গ্রামের মানুষজন তাদের কাঙ্খিত ডিজিটাল সেবা গ্রহণ করছেন। গাইবান্ধা, গোবিন্দগঞ্জ উপজেলাধীন ১০নং রাখালবুরুজ ইউনিয়ন ধর্মপুর গ্রামের দরিদ্র পরিবারে জন্ম নিলেও আমার স্বপ্ন ছিল তথ্য প্রযুক্তিগত সেবায় গ্রামীণ ব্যবস্থাকে উন্নত করার। আজ সমাজের সর্বস্তরে সেবাপ্রদানকারী হিসাবে সবার কাছেই পরিচিত হয়ে উঠেছি। পরিবারের দারিদ্রতার কষাঘাতে চরম হতাশায় কাটতেছিল দিন। এক সময় শুরু করি রেডিও মেকানিকের কাজ। আয় বাড়ানোর চিন্তা থেকে ২০০৮ সালে একটা কম্পিউটার কিনে তা দিয়েই তথ্য প্রযুক্তির আদলে হাতে খড়ি। নিজের কাজের পাশাপাশি এক সময় ইউনিয়ন পরিষদের কিছু কাজ করতাম। বর্তমান ডিজিটাল বাংলাদেশের রুপকার মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার রুপকল্প বাস্তবায়নের প্রধান কেন্দ্রবিন্দু ইউনিয়ন তথ্য ও সেবা কেন্দ্রের উদ্যোক্তা হিসেবে ২০১১ সালে নিয়োগ পাই। যোগদানের পরেই অন্ধকারাচ্ছন্ন গাইবান্ধা , গোবিন্দগঞ্জ উপজেলার রাখালবুরুজ ইউনিয়ন নদী ভাঙ্গন এলাকা এবং প্রত্যন্ত চরাঞ্চলের জনগোষ্ঠী যেখানে ২০০৯ সালেও তথ্য প্রযুক্তি সম্পর্কীত কোন ধারণা ছিলনা, কেউ বোঝেনি ছেলে-মেয়ের ভর্তি ও পরীক্ষার ফলাফল হাতের নাগালে চলে আসবে। গ্রামের জনগোষ্ঠীকে তথ্য প্রযুক্তির আদলে এনে প্রয়োজনীয় সেবা সমূহ কৃষি, স্বাস্থ্য, প্রশাসনিক কাজ, জনগণ কেন্দ্রীক সেবা দোড়গোড়ায় নিশ্চিত করণে প্রচেষ্টার অধিক সফলতায় আস্থা অর্জন সম্ভব হয়েছে। অক্লান্ত পরিশ্রমের মাধ্যমে জনগণ কেন্দ্রীক সেবা সমূহ জনগণের দোড়গোড়ায় নিশ্চিত করতে গিয়ে অনেক ঘাতপ্রতিঘাতের মুখোমুখী হতে হয়েছে। অসম্ভবকে সম্ভবে রূপান্তরীত করার অক্লান্ত প্রচেষ্টায় তথ্য প্রযুক্তিগত সেবার মাধ্যমে দ্রুত হয়ে উঠি সাধারন মানুষের আস্থা অর্জনের প্রতীক। আজ আমাকে শ্রেষ্ঠ উদ্যোক্তা হিসেবে গ্রাম থেকে মন্ত্রনালয় পর্যন্ত সবাই ভুয়সী প্রসংশায় আবদ্ধ করেছেন। দারিদ্রের কষাঘাতে কর্মচঞ্চলতা ও প্রতিভা প্রবল থাকায় সেই অচেনা তরুন যুবক আজকের সফল উদ্যোক্তা হিসাবে নিজেকে গড়ে তুলেছি।সফলতার পিছনে জেলা ও উপজেলা প্রশাসনের উৎসাহ এবং দিক নির্দেশনা আমাকে অনুপ্রানিত করেছিল। ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টারের মাধ্যমে সরকারী-বেসরকারী সেবা সমূহ জনগণেরদোড়গোড়ায় নিশ্চিত করার স্বীকৃতি স্বরূপ কামারজানী ইউডিসি উদ্যোক্তা রুপে ২০১২ সালে উপজেলা পর্যায়ে শ্রেষ্ঠ উদ্যোক্তা হিসেবে নির্বাচিত হই। এই সম্মানের উৎসাহ ও অনুপ্রেরণায় আমি নিজেকে আরও কর্ম-চাঞ্চল্যে করারফলে আবারও একই বছরে ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলায় জেলা প্রশাসন আমাকে জেলা শ্রেষ্ঠ উদ্যোক্তা ২০১২ পুরুষ্কার প্রদান করেন। ইউডিসিকে জনগণের অধিক আস্থা অজনে ব্যাপক পরিসরে তথ্য প্রযুক্তি ব্যবহার সম্প্রসারনে যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে কর্ম চাঞ্চল্যতায় সর্বশক্তি নিয়োগ করি। যার প্রমান স্বরূপ আমাকে আবারও জেলা প্রশাসন জেলা বর্ষসেরা উদ্যোক্তা – ২০১৩, ২০১৪, ২০১৫, ২০১৬ ও ২০১৭ নির্বাচিত করেন। ২০২০ সালে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি বিভাগের আয়োজনে মুজিব শতবর্ষ ই-সেবা ক্যাম্পেইনে চমক দেখানো অংশগ্রহণের জন্য দেশসেরা উদ্যোক্তা (১ম স্থান) হিসেবে পুরুষ্কৃত হই এবং এটুআই আয়োজিত ২০১৮ সালে এসে কক্সবাজারে অনুষ্ঠিত দেশ সেরা উদ্যোক্তা সম্মেলনে দেশ সেরা উদ্যোক্তা ঘোষনা করেন। ২০১৫ সালে ‘‘এমপাওয়ারিং রুরাল কমিউনিটিস রিচিং দ্য আনরিচড’’ ইউনিয়ন তথ্য ও সেবা কেন্দ্রের প্রকল্প সমাপনী অনুষ্ঠানে কামারজানী ইউ ডিসি উদ্যোক্তাহিসেবে আমাকে রংপুর বিভাগীয় শ্রেষ্ঠ উদ্যোক্তা নির্বাচিত করেন। আমাকে প্রতিদিন সকাল নয়টা থেকে রাত নয়টা পর্যন্ত ইউডিসির মাধ্যমে জনগণকেন্দ্রিক সেবা সমূহ আন্তরিকতার সাথে নিশ্চিত করায় ইউডিসির স্বচ্ছলতা সহ আমার জীবিকায় অনেক পরিবর্তন পরিলক্ষিত হয়েছে। আমি প্রায়ই স্বপ্ন দেখি, প্রত্যন্ত অঞ্চলে একটি আইসিটি প্রশিক্ষণ কেন্দ্র গড়ে তোলার। যার কাজ ইতোমধ্যে দুর্গম চর এলাকায় রাখালবুরুজ ইউডিসি-২ নামে একটি ইউনিয়ন ডিজিটাল সেন্টার উপজেলা প্রশাসন ও ইউনিয়ন পরিষদের সহায়তায় ও পৃষ্ঠপোষকতায় প্রতিষ্ঠা করে তার বাস্তাবায়ন নিশ্চিত করে চলছি। শুধু তাই নয় কামারজানি ডিজিটাল কম্পিউটার ট্রেনিং সেন্টারের মাধ্যমে বেকার যুবকদের প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে দক্ষ জনশক্তি গড়ে তুলতে কাজ করে যাচ্ছি । দিনের পর দিন স্বপ্নের ফেরিওয়ালার মত নিত্য নতুন সেবা ইউডিসিতে প্রদান করে নিজের ও অন্য দুইজন সহকারী উদ্যোক্তার স্বচ্ছলতা সাফল্যের সিড়িতে পৌছে দিচ্ছি।
পরিকল্পনা ও বাস্তবায়নে: মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ, এটুআই, বিসিসি, ডিওআইসিটি ও বেসিস